জালাল আহমদ, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ :

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে সীমান্তবর্তী আতুয়া সীমান্ত এলাকার সোনাই নদী (শাখা নদী) থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় বিজিবি’র নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৪ মাস ধরে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু ও মাটি পাচার করে আসছে বালু ও মাটিখেকো একটি চক্র।

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ব্যাপকহারে নদী ভাঙ্গনের সৃষ্ট হয়েছে। নয়াগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় ৩০০ গজের মধ্যে ক্ষেতের জমি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ায় ভূমি মালিক এবং কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপি’র আতুয়া গ্রামঘেঁষা ও বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় ৩শ’ গজের মধ্যে সোনাই নদীর ধোপাডহর নামক স্থানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। ভূমি অফিসের ছয় নম্বর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, বালু ও মাটি উত্তোলিত স্থানে কোনো ধরণের বালুমহালের উল্লেখ নেই।

নদীপারের ভূমি মালিক মুক্তিযোদ্ধা তুতিউর রহমান, আব্দুস সামাদ, কৃষক মকবুল হোসেন প্রমুখ অভিযোগ করেন, প্রায় ৪ মাস ধরে বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রামের আ’লীগ নেতা ফয়সল ও কবির ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন। এতে তাদের কৃষি জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে এবং দ্রুত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এলাকার লোকজন বাঁধা দিলে ফয়সল ও কবির তাদের জানায়, তারা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। স্থানীয় আ’লীগ ও বিজিবি ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে।

ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলকারী শ্রমিক জোবায়ের হোসেন, কালা মিয়া ও রাসেল আহমদ জানান, কিশোরগঞ্জের মনির হোসেন তাদেরকে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় ফয়সল ও কবির বালু উত্তোলনের সবকিছু দেখভাল করছেন। এখান থেকে উত্তোলনকৃত বালু ও মাটি একটি রাস্তার জন্যে বিক্রি হচ্ছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ (প্যানেল চেয়ারম্যান) জানান, অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বিয়ানীবাজারের কিছু লোক সোনাই নদীর বড়লেখা অংশ থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ নিয়ে দুই এলাকার মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। এ নিয়ে গত ০৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢিল ছুঁড়াছুঁড়ির ঘটনাও ঘটে।

অভিযুক্ত ফয়সল আহমদ ও কবির আহমদ জানান, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা আ’লীগ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবহিত রয়েছে। বিয়ানীবাজারের একটি নতুন রাস্তার জন্য জনৈক ইজারাদারের হয়ে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে দাবি করলেও ইজারার বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি।

বিয়ানীবাজার ৫২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বশীলরা জানান, অপরাধীরা ধরা পড়লে তাদের অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন জনের নাম ভাঙ্গিয়ে থাকে। সোনাই নদী হতে ড্রেজার মেশিনে বালু ও মাটি উত্তোলনের বিষয়ে বিজিবি কিছুই জানে না। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনে বিজিবি’র সহযোগিতা চাইলে বিজিবি সহায়তা করবে।

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমীর বিশ্বাস বালু উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিহিত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অবহিত করেছেন বলে জানান।

এদিকে এ নিয়ে মিডিয়াকর্মীর উপস্থিতির কারণে বালু তোলা বন্ধ থাকলেও ড্রেজার মেশিনটি অকুস্থলে থাকায় বালুখেকোরা আবার বালু তোলা শুরু করবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।